চলে গেলেন কিংবদন্তি সুরস্রষ্টা আলম খান
ডেস্ক রিপোর্ট || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা (০৮ জুলাই): বাংলা গানের কিংবদন্তি সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলম খান আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শুক্রবার বেলা ১১টা ৩২ মিনিটে তিনি মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। এ খবর নিশ্চিত করেছেন তার ছেলে সংগীত পরিচালক আরমান খান।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আরমান খান বাবার মৃত্যু নিয়ে লিখেছেন, ‘আব্বা চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আজ বেলা ১১টা ৩২ মিনিটে। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’
আরমান খান আরও জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন আলম খান। পরে তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই শুক্রবার তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তিনি জানান, আলম খানের দুই দফায় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর শ্রীমঙ্গলে স্ত্রীর কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হবে।
প্রথম জানাজা আজ শুক্রবার বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে ঢাকার তেজগাঁওয়ের চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে এবং দ্বিতীয় জানাজা বাদ আসর এফডিসিতে অনুষ্ঠিত হবে।
এরপর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। সেইখানে মহাজিরাবাদ এলাকার পাহাড় চূড়ায় নির্মিত মসজিদুল আউলিয়া হজরত খাজা শাহ মোজাম্মেল হক (র.)-এর প্রাঙ্গণে জান্নাতুল ফেরদৌস কমপ্লেক্সে স্ত্রীর কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হবে।
বাংলা সিনেমার গানে অবিস্মরণীয় নাম আলম খান। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি অসংখ্য কালজয়ী গান সৃষ্টি করেছেন। একাধারে গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন তিনি।
আলম খান কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী পপগুরু-খ্যাত আজম খানের বড় ভাই। তিনি ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।
১৯৪৪ সালের ১০ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের বানিয়াগাতি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আলম খান। ছোটবেলাতেই তিনি একটি অর্কেস্ট্রা গ্রুপে বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখেন। সেখানে তার প্রথম সারেগামার হাতেখড়ি হয়। পরবর্তীতে তিনি ওস্তাদ ননি চ্যাটার্জীর কাছে তালিম নেন।
১৯৬১ সালে মঞ্চ নাটক ‘ভাড়াটে বাড়ী’তে আবহ সংগীতের কাজ করেন আলম খান। সেখানে সংগীত থেকে তার প্রথম রোজগার। এরপর টেলিভিশনে শিশুদের অনুষ্ঠানে কাজ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের বছর খানেক আগে আবদুল্লাহ আল মামুনের প্রযোজিত টেলিভিশনের প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’ এর সংগীত পরিচালনার দায়িত্ব পান।
১৯৭০ সালে পরিচালক আব্দুল জব্বার খানের ‘কাঁচ কাঁটা হীরে’ ছবিতে সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে রূপালি পর্দায় কাজ করা শুরু করেন আলম খান। এরপর ধীরে ধীরে ঢালিউডের অন্যতম সংগীত পরিচালক হিসেবে স্থায়ী আসন পান।
আলম খানের সুর ও সংগীত পরিচালনায় সৃষ্ট অসংখ্য গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো— ওরে নীল দরিয়া, হীরামতি হীরামতি ও হীরামতি, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস দম ফুরাইলে ঠুস, আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, কী জাদু করিলা পিরিতি শিখাইলা, বুকে আছে মন, তুমি যেখানে আমি সেখানে, সবাই তো ভালোবাসা চায়, ভালোবেসে গেলাম শুধু, চাঁদের সাথে আমি দেবো না তোমার তুলনা, আমি একদিন তোমায় না দেখিলে, আজকে না হয় ভালোবাসো আর কোনদিন নয়, তেল গেলে ফুরাইয়া, আমি তোমার বধূ তুমি আমার স্বামী, জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, তিন কন্যা এক ছবি, মনে বড় আশা ছিল, দুনিয়াটা মস্ত বড়, ও সাথীরে যেও না কখনো দূরে, বেলি ফুলের মালা পরে, কাল তো ছিলাম ভাল, ওরে ও জান আমারই জান, চুমকি চলেছে একা পথে, ভালোবাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া ও তুমি কি এখন আমারই কথা ভাবছো।
আলম খান শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। ছবিগুলো হলো: ‘বড় ভাল লোক ছিল’ (১৯৮২), ‘তিন কন্যা’ (১৯৮৫), ‘সারেন্ডার’ (১৯৮৭), ‘দিনকাল (১৯৯২) এবং ‘বাঘের থাবা’ (১৯৯৯)। শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে ২০০৮ সালে পেয়েছেন ‘কি জাদু করিলা’ ছবির জন্য।
আলম খানের জন্ম ১৯৪৪ সালের ২২ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের বানিয়াগাতি গ্রামে। ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী স্কুল থেকে তিনি মেট্রিক পাস করেন। এই স্কুলে থাকা অবস্থায় গানের প্রতি আগ্রহী হন এবং মায়ের উৎসাহে তিনি গানের চর্চা শুরু করেন। এরপর বাবাও সমর্থন দেন। তার ছোট ভাই ছিলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি পপ শিল্পী আজম খান।