বুধবার

২৪ এপ্রিল ২০২৪


১১ বৈশাখ ১৪৩১,

১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে মুন্সীগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রস্তাব 

নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ০১:৩৭, ১৭ অক্টোবর ২০২১  
ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে মুন্সীগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রস্তাব 

গ্রাফিক্স বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ

ঢাকা (১৬ অক্টোবর): মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার মেঘনাঘাটের জামালদিতে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিমার্ণ প্রকল্পের অনুমোদনের জন্য ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। এটি গ্যাস বা এলএনজি ভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে। 

২২ বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের জন্য, জ্বালানির ধরন গ্যাস হলে নিমার্তা প্রতিষ্ঠানকে  ৩৭ হাজার ৪৪৩ কোটি ১২ লাখ টাকা ও এলএনজিভিত্তিক হলে ৬৯ হাজার ১৬৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের  জন্য দুটো কনসোর্টিয়াম প্রস্তাব দিয়েছে। এর একটি হল এডরা পাওয়ার হোল্ডিং এসডিএন বিএইচডি, মালয়েশিয়া এবং ইনিএভিশন পাওয়ার লিমিটেড। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এতথ্য জানান। 

গেল সপ্তাহে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। এই কারণে আগামীকাল রবিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। 

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ঠিক রাখতেই এই মুন্সীগঞ্জের বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বছর প্রতি বিদ্যুতের চাহিদা ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে, এটা ধরেই ২০৪১ সালের পরিকল্পনা করেছে সরকার। সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎসহ বর্তমানে দেশের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। 

অন্যদিকে, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৬ হাজার ৪২৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র অবসরে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড(পিডিবি)। পুরানো কেন্দ্র অবসরে পাঠানো এবং সারাদেশে বিদ্যুতায়নের ফলে আগের যেকোন সময়ের চাইতে এখন উৎপাদন ও চাহিদা দুটোই বেশি। এজন্য পিডিবি প্রতি বছর চাহিদা বাড়ার হার ১০ শতাংশ ধরেছে। এই কারণে বর্ধিত চাহিদা মেটাতে বছরভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রয়োজন। যে কারণে এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, বেসরকারী খাতের ‘প্রাইভেট সেক্টর পাওয়ার জেনারেশন পলিসি-১৯৯৬’ এর আওতায় বিল্ড ওন এন্ড অপারেশন (বিওও) ভিত্তিতে আইপিপি হিসেবে মুন্সীগঞ্জ গজারিয়ার মেঘনাঘাট জামালদিতে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়ন করবে। 

এই প্রকল্পের কারিগরি কমিটি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেতে কেন্দ্রটির জন্য স্পন্সর কোম্পানির সঙ্গে দরকষাকষির মাধ্যমে রেসপনসিভ দরদাতা কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে ২২ বছর মেয়াদে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাস অথবা এলএনজিভিত্তিক বাস্তবায়নের সুপারিশ করে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রকল্প প্রস্তাবণায় বলা হয়েছে, স্পন্সর প্রতিষ্ঠান প্রস্তাবিত কেন্দ্রের পাওয়ার ইভাক্যুয়েশনের জন্য নিজ খরচে ও উদ্যোগে দরকারি ট্রান্সমিশন লাইন, সাব-স্টেশন নির্মাণ করবে। প্রকল্পটিতে প্রাথমিক জ্বালানী (গ্যাস বা এলএনজি) সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে সঞ্চালন পাইপলাইনের অফটেক থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পূর্ণ নিজস্ব খরচে গ্যাস সরবরাহ পাইপলাইন ও আরএমএস নির্মাণসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক ব্যয় নির্বাহ করবে।

কেন্দ্রটি নিমার্নে আগ্রহী সংস্থা ২২ বছর মেয়াদি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতের জন্য প্রতি কিলোওয়াট ঘন্টার দাম ৩ দশমিক ৬৯২৩ মার্কিন সেন্ট, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই টাকা ৯৫ পয়সা এবং এলএনজিভিত্তিক প্রতি কিলোওয়াট ঘন্টার দাম ৬ দশমিক ৮০৯৮ মার্কিন সেন্ট, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ টাকা ৪৫ টাকা প্রস্তাব করে। 

প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সম্পর্কে পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) মতামত চাওয়া হলে গেল বছরের মার্চে কোম্পানীটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রস্তাবিত কেন্দ্র থেকে পিজিসিবি নির্মিতব্য গজারিয়া ২৩০/১৩২ কেভি উপকেন্দ্র পর্যন্ত ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন এবং গজারিয়া উপকেন্দ্র পর্যন্ত ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন এবং গজারিয়া উপকেন্দ্রে দুটি ২৩০ জিআইএস ‘বে’ নির্মাণের মাধ্যমে পাওয়ার ইভাক্যুয়েশন করার সুযোগ আছে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে কেন্দ্রটি সম্পর্কে দেওয়া মতামতে জানানো হয়, ভবিষ্যতে দেশীয় গ্যাসের প্রাপ্যতা এবং স্থলভাগে এলএনজি টার্মিনাল করার পর গ্যাসের সরবরাহ সার্বিকভাবে বৃদ্ধি নিশ্চিত হওয়ার পর বেসরকারি খাতে প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস বা এলএনজি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

জ্বালানি বিভাগের মতামতে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রস্তাবিত কেন্দ্রটির গুরুত্ব বিবেচনায় প্রয়োজনে দেশের অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে বিউবো’র সমন্বয়ের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা যেতে পারে। এই প্রেক্ষিতে কারিগরি কমিটি কেন্দ্রটির সকল কারিগরি দিক পর্যালোচনা করে প্রস্তাবটি আর্থিক ও কারিগরিভাবে যোগ্য বলে মতামত দেয়। পরে প্রস্তাবটির বিষয়ে নেগোশিয়েশন করে চুক্তি করতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি নেওয়া হয়।
 

Nagad
Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়