শুক্রবার

২৬ এপ্রিল ২০২৪


১৩ বৈশাখ ১৪৩১,

১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ক্রেতাদের নাভিশ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ২২:০০, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ২২:০২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ক্রেতাদের নাভিশ্বাস

ছবি: বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ

ঢাকা (২৫ সেপ্টেম্বর): বেড়েছেই চলছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে ফের বেড়েছে মুরগি, কাঁচামরিচসহ সবধরনের সবজির দাম। ফলে, বাজারে গিয়ে স্বস্তি পাচ্ছেন না সাধারণ ক্রেতারা।

এ সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে  ৫ টাকা এবং পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগি কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। কাঁচামরিচের দাম কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা এবং বিভিন্ন সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।

শনিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, ঝিগাতলা ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট কাঁচাবাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম বাড়ার প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঋতু পরিবর্তনের মাঝামাঝি সময়টাতে সবজির দাম বেশি থাকে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন জেলায় অনেক আবাদি জমে ডুবে যাওয়ায় সবজির দাম বেড়েছে। এদিকে, প্রতিদিনই বাড়ছে মুরগির দাম। লকডাউনের সময় ছোট ছোট পোল্ট্রি ফার্মগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া মুরগির খাবারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দামে প্রভাব পড়েছে।

শনিবার বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। আর সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকা পর্যন্ত, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। তবে, আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে দেশি মুরগি। প্রতি কেজি দেশি মুরগি ৪৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। প্রসঙ্গত, চলতি মাসের শুরুর দিকে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ২২০ থেকে ২৪০ টাকার মধ্যে।

ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম বাড়ার বিষয়ে কারওয়ানবাজারের মুরগি ব্যবসায়ী শহীদ মিয়া জানান, মুরগির খাদ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। প্রতি ২৫ কেজি খাবারের বস্তায় ৮০ টাকা এবং বিদেশি খাবারের ৫০ কেজির বস্তায় ৫০০ টাকা বেড়েছে। এ জন্য প্রতিদিনই মুরগির দাম বাড়ছে।

ঝিগাতলা কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী আবুল হাশেম জানান, লকডাউনের সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ছোট ছোট খামারগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। আর বর্তমানে সব কিছু খুলে যাওয়ায় যে চাহিদা তৈরি হয়েছে তার অনুপাতে মাল নেই। তাই দাম বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনে দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে।

এদিকে, হঠাৎ করেই কাঁচা মরিচের ঝাঁজ বেড়েছে। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা।

কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা শরীফ সুজন জানান, কাঁচা মরিচের দাম হঠাৎ করেই বেড়েছে। আড়ত থেকে তাদের বেশি দাম দিয়ে আনতে হয় তাই বেশি দামেই বিক্রি করছে। তবে বৃষ্টির ও বন্যার কারণে মরিচের আবাদ নষ্ট হয়ে গেছে। এ জন্যও মরিচের দাম বেড়েছে।

এদিকে, সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেগুন ৫০ টাকা, ভেণ্ডি ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, করোলা ৬০ টাকা, টমেটো ৮০ থেকে ১০০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা, ঝিঙে ৫০ টাকা, পটল ৫০ টাকায়, কাকরোল ৫০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, শীতের আগাম সবজি শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা।

কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা আলিম হোসেন জানান, এখন ঋতু পরিবর্তন হচ্ছে পাশাপাশি বন্যার কারণে সবজির দাম একটু বেশি। একদিকে গ্রীষ্মকালের সবজি শেষ এবং শীতকালের সবজি বাজারে আসবে তাই এই সময়টাতে দাম বেশি থাকে।

অপরদিকে, গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ ও চিনি। খুচরা বাজারে পাইজাম প্রতি কেজি ৫০ টাকা, আটাশ ৫৫ টাকা এবং মিনিকেট ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি ছোট দানার মশুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। আর ভারতের বড় দানার মশুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়।

প্রতি লিটার সয়াবিন তেলও পূর্বের দামে বিক্রি হচ্ছে ১৪৯ টাকা। কোম্পানিভেদে পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়। খোলা পামওয়েল তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়।

পূর্বের দরে আলু প্রতি কেজি ২০ টাকা এবং পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া, খোলা চিনি প্রতি কেজি ৭৮ টাকা, প্যাকেট জাত চিনি ৮০ এবং লাল চিনি ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহের দামে বিক্রি হচ্ছে গরু ও খাসির গোশত। প্রতি কেজি গরুর গোশত ৬০০ টাকা ও খাসির গোশত ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ানবাজারে সবজি কিনতে আসা ক্রেতা ইমাম হোসেন জানান, জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। বাজারে সবধরনের পণ্যের দামই বেশি। আমাদের তো আয় সীমিত কিন্তু বাজারে পণ্যের দাম লাগামহীন। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের অনেক কষ্ট হয়ে যাবে।

শহীদ আলী নামের আরেক ক্রেতা জানান, চাল ডাল তেল তো আগ থেকে বাড়তি। এখন আবার মুরগির ডিম, মাংসের দামও বেড়ে গেছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে কিন্তু আমাদের আয় তো বাড়ছে না। বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে।

Nagad
Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়