মানসম্মত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংকটে কেইপিজেডের কোম্পানিগুলো
হাসান আজাদ || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: কর্ণফুলী ইডিপজেড, ফাইল ফটো
ঢাকা (২৬ জুলাই): নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ পাচ্ছে না কর্ণফুলী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা বা কর্ণফুলী ইপিজেড। এর ফলে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নিয়ন্ত্রণাধীন কর্ণফুলী ইডিপজেডে থাকা দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে, কর্ণফুলী ইপিজেডের চাহিদার বিদ্যুৎ বর্তমানে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (সিইপিজেট) একটি বেসরকারি কেন্দ্র ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) থেকে আনতে হচ্ছে। ফলে কর্ণফুলী ইপিজেডে থাকা কোম্পানিগুলোর জন্য মানসম্মত ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
কর্ণফুলী ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ এনামুল হক এই প্রসঙ্গে বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ’কে জানান, বর্তমানে আমাদের কম-বেশি ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। কিন্তু সামনে কয়েকটি নতুন কারখানা চালু হবে এবং পুরনো কয়েকটি কারখানার এক্সটেনশন হবে। পরে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাবে।
কর্ণফুলী ইপিজেড নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা করার চেষ্টা করলেও এখনো সম্ভব হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের এখানে বেসরকারি একটি কোম্পানি ৪০ থেকে ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কেন্দ্র করেছে। কিন্তু গ্যাসের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে চালু করা যাচ্ছে না। এই কেন্দ্রটি চালু হলে কেইপিজেডের চেহারাই পাল্টে যেত। আমাদের আরও অনেক বেশি সক্ষমতা বাড়ত।
কর্ণফুলী ইপিজেডের বিনিয়োগকারীরা মানসম্মত ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ চায় উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা জানান, জাতীয় গ্রিডে সমস্যা হলে এখানেও বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা হয়। তবে, তা মাঝে মাঝে। ওই সময় ২০/৩০ মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ থাকে না। তবে, ভোল্টেজ সমস্যা রয়েছে।
এই ইপিজেডে মানসম্মত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে না, এই বিষয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডেও (পিডিবি) প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ’কে জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে সঞ্চালন লাইনের কাজ চলছে। এই কারণে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেতে সমস্যা হতে পারে। আর শিল্প কারখানায় মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছি।
বেপজার কর্মকর্তারা জানান, কর্ণফুলী ইপিজেডে বর্তমানে ৫০টি শিল্প কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার বিপরীতে কম-বেশি ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে বর্তমানে সিইপিজেডে ইউনাইটেড পাওয়ারের স্থাপিত কেন্দ্র থেকে ২০ মেগাওয়াট এবং পিডিবি থেকে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেওয়া হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী এটা কম-বেশি হয়।
ওই কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে বিদ্যুতের ভোল্টেজ ঠিক না থাকা ও নিরবচ্ছিন্ন না হওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে অনেক অভিযোগ আসছে। ভোল্টেজ সমস্যার কারণে অনেক কোম্পানির উৎপাদন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে পড়ছে। সম্প্রতি কর্ণফুলী ইপিজেডে মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে উৎপাদনকারী জাপানভিত্তিক একটি বিদেশি কোম্পানি মানসম্মত বিদ্যুৎ না পাওয়ার কারণে তাদের উৎপাদন ব্যাহত এবং যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ জানিয়েছে। এ ছাড়া, আরও কয়েকটি কোম্পানিও বিদ্যুতের ভোল্টেজ সমস্যার কারণে যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার কথা জানিয়েছে।
একাধিক কর্মকর্তা জানান, ভোল্টেজের এই সমস্যার কথা আমরা একাধিকবার সরবরাহকারীদের জানালেও পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। পাশাপাশি কেইপিজেডের মধ্যে স্থাপিত কেন্দ্রটি চালু করতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চেয়ে গেল জুন মাসে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিবকে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম চিঠিও দিয়েছেন। কিন্তু এখনো এর কোনো সুরাহা হয়নি।
প্রসঙ্গত, সোমবার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এক বৈঠকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন।