শুক্রবার

২৯ মার্চ ২০২৪


১৫ চৈত্র ১৪৩০,

১৯ রমজান ১৪৪৫

বাংলাদেশের অর্থনীতির সর্বশেষ গতি প্রকৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ২২:০৩, ৩ অক্টোবর ২০২২   আপডেট: ২২:০৪, ৩ অক্টোবর ২০২২
বাংলাদেশের অর্থনীতির সর্বশেষ গতি প্রকৃতি

গ্রাফিক্স: বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ

ঢাকা (০৩ অক্টোবর): গত এক দশকে উচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। এমনকি করোনা মহামারীর মধ্যেও ২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭ শতাংশের উপরে জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থ বছরে মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতকে পিছনে ফেলেছে।
 
তিন মাস আগে সমাপ্ত ২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় রেকর্ড ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমলেও তা ছিল ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উপরে। একই অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় ছিল ৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। যা কিনা বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিশীলতার প্রমান।  

কিন্তু, হঠাৎ শুরু হওয়া রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দেখা দেয়। বাংলাদেশের জন্য অশনি সংকেট হিসেবে দেখা দিল পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং মূদ্রা বিনিময় হার।     

বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের মধ্যে ৩৯তম এবং ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে ২৯তম যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে রয়েছে ২য় অবস্থানে। বাংলাদেশ গত এক দশক ধরে গড়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হার ধরে রেখে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং বর্তমানে বিশ্বের ৭ম দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ।

রপ্তানি: সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কমে গেছে। তৈরী পোশাকসহ আরো বেশ কয়েকটি প্রধান পণ্যের রপ্তানি হ্রাস পাওয়ায় টানা ১৩ মাস পর পণ্য রপ্তানির প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েছে।

রবিবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত সর্বশেষ রপ্তানি আয়ের তথ্যে দেখা গেছে, বাংলাদেশে থেকে সেপ্টেম্বরে ৩৯০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ৪১৬ কোটি ৫৪ লাখ ডলার।

২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথম তিন মাসে মোট ১২৪২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১১০২ কোটি ১৯ লাখ ডলারের পণ্য।

২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মত সেবা ছাড়া শুধু পণ্য রপ্তানি থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয় আসে; মোট রপ্তানি হয় পাঁচ হাজার ২০৮ কোটি ২৬ লাখ ডলারের পণ্য যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি।

বাণিজ্য ঘাটতি: ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ১২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ, যা গত অর্থবছরের ওই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরের এ দুই মাসে ১০ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।

এ অর্থবছর জুলাই-আগস্ট মাসে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৮ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারের, যা গত অর্থবছরের ওই সময়ের চেয়ে ২৩ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ দুই মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে এসেছিল ৬ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।

এ হিসাবে অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বাণিজ্য ঘাটতি থাকছে ৪ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার। জুলাই মাসে ২ বিলিয়নের সামান্য উপরে থাকা বাণিজ্য ঘাটতি আগস্ট শেষে দ্বিগুনের বেশি বেড়েছে।

বাংলাদেশ ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ করেছিল ৩৩ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে। তাতে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ১৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

রেমিট্যান্স: সেপ্টেম্বরে দেশে প্রবাসীদের আয় (রেমিট্যান্স) পাঠানো কমেছে। গেল মাসে প্রবাসীরা মাত্র ১৫৪ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। যা গেল বছর একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১১ শতাংশ কম এবং গত ৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে ১৫৩ কোটি ৯৫ লাখ (প্রায় ১.৫৪ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ কোটি ৭২ লাখ ডলার বা ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার।

এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশে ১৪৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল।

চলতি অর্থবছরের টানা দুই মাস ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত আগস্ট মাসে ২০৩ কোটি ৭৮ লাখ (২ দশমিক ০৩ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। এর তুলনায় সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রায় এক চতুর্থাংশ কমে গেছে। এর আগের মাস জুলাইয়ে দেশে ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে।

যদিও জুলাইয়ে পবিত্র ঈদুল আজহার কারণে দেশে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিল। তবে আগস্টে বড় উৎসব ছিল না, তবুও প্রবাসী আয় ২০০ কোটি ডলার ছাড়ায়। কিন্তু দুর্গাপূজা সামনে রেখেও সেপ্টেম্বরে দেশে আশানুরূপ প্রবাসী আয় আসেনি।

জিডিপি: একটি দেশের অভ্যন্তরে এক বছরে চূড়ান্তভাবে উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবার বাজারে সামষ্টিক মূল্যই হচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি বা গ্রোস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট)। আগের বছরের তুলনায় পরের বছরে এ উৎপাদন যে হারে বাড়ে সেটি হচ্ছে জিডিপির প্রবৃদ্ধি। জিডিপি একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান সূচক।

বাংলাদেশের বর্তমান জিডিপি: ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য উত্থাপিত ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার এই বাজেট প্রস্তাবে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।

 

Nagad
Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়