বৃহস্পতিবার

২৫ এপ্রিল ২০২৪


১২ বৈশাখ ১৪৩১,

১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সঞ্চয়পত্র বিক্রি কৌশলে কমানো হয়েছে: গভর্নর

নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ১৯:৫১, ৩ অক্টোবর ২০২২   আপডেট: ১৯:৫৫, ৩ অক্টোবর ২০২২
সঞ্চয়পত্র বিক্রি কৌশলে কমানো হয়েছে: গভর্নর

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা (০৩ অক্টোবর): সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধ্বস নামেনি বরং কৌশল করে বিক্রি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেছেন, আমরা চাই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না করে মানুষ টাকা নিয়ে ক্যাপিটাল মার্কেটে আসুক।

বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে সোমবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গভর্নর বলেন, বন্ড মার্কেটের বিকাশের বড় সমস্যা ছিল সঞ্চয়পত্র। সঞ্চয়পত্রের হাই ইন্টারেস্ট রেট ছিল এবং প্রকৃতপক্ষে কোনো ক্যাপ ছিল না। যদিও বলা থাকতো ৫০ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না। যিনি কিনলেন তিনি এক ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনলেন, আবার আরেক ব্যাংকে গিয়ে ৫০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র কিনে নিলেন। তিনি স্টেটমেন্টও দিচ্ছেন এই ৫০ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র নেই। আমরা এমন লোক দেখছি যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে, তাদের বাসা থেকে ১৪৬ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র উদ্ধার হয়েছে।

তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রের যে হাই ইন্টারেস্ট আমরা কিন্তু জনগণের ট্যাক্সের টাকায় দেই। সবার ট্যাক্সের টাকা দিয়ে এই সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগকারীদের আমরা ইন্টারেস্ট দিচ্ছি। সুতরাং গরিব মানুষের ট্যাক্সের টাকা নিয়ে আমরা বড়লোকদের ফাইন্যান্স করছি। আমি অর্থ সচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম যে কাজটা করি, এটা অটোমেশন করা। অটোমেশনের উদ্দেশ্য ছিল আগে ক্যাপ এনসিওর করা। একজন লোক যেন ৫০ লাখের বেশি কিনতে না পারে। সেটা আমরা করে ফেলেছি। এখন কেউ ব্যাংক থেকে ৫০ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন না।

গভর্নর বলেন, দ্বিতীয় হলো সঞ্চয়পত্রের ইন্টারেস্ট রেট অনেক কমানো, কিন্তু আমাদের পলিটিশিয়ান যারা তারা আমাদের থেকে অনেক বেশি বোঝেন, তারা আমাদের বললেন এটার মধ্যে একটা সেফটিনেট এলিমেন্ট আছে। যেটা আমরা ইগনোর করে গিয়েছিলাম। কিছু লোক কোনোভাবে সঞ্চয়পত্র জোগাড় করে, তার ওপর ডিপেন্ড করে বিশেষ করে বয়স্ক লোক। তখন আমাদের পরামর্শ দেওয়া হলো, একটা সময় পর্যন্ত ইন্টারেস্ট রেট ঠিক রেখে তারপর কমিয়ে আনা।

তিনি বলেন, আমরা সেটাই করেছি। ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ইন্টারেস্ট ঠিক রেখে, এরপর এক শতাংশ, তারপর এক শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে এবং সেখানে আরও ১০ শতাংশ ট্যাক্স আছে। যেটা হয়েছে, এখন সঞ্চয়পত্র ততটা অ্যাট্রাকটিভ (আকর্ষণীয়) না। বরং আপনি যদি বন্ড মার্কেটে যান, এটা সঞ্চয়পত্রের সঙ্গে কম্পিটিশন করতে পারবে। এটা করতে আমাদের চার বছর লেগেছে।

আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, আমরা পত্রিকায় দেখলাম সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধস, আসলে ধস নামেনি, আমরা বিক্রি কমিয়ে দিয়েছি। এখন অন্যভাবে রিপোর্ট করা হচ্ছে, এটা ধস না। আমরা চাই মানুষ টাকা নিয়ে ক্যাপিটাল মার্কেটে আসুক। সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ না করে ক্যাপিটাল মার্কেটে আসুক, যাতে উদ্যোক্তারা এই টাকা নিয়ে ইনভেস্ট করতে পারেন। আর সঞ্চয়পত্র যেহেতু উচ্চ ইন্টারেস্ট রেট, সরকার অন্য জায়গা থেকে কিন্তু কম ইন্টারেস্টে টাকা সংগ্রহ করতে পারে।

আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, বন্ড মার্কেটে যে কুপন বা ইন্টারেস্ট দেয় তা বছর শেষে একবার। কিন্তু যিনি ব্যাংক থেকে লোন নেন তাকে প্রতি কোয়ার্টারে টাকা দিতে হয়। অনেক জায়গায় ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো মাসে মাসেও চার্জ করে। এখন ক্যাশফ্লোর একটা ব্যাপার আছে, ব্যবসার একটা ব্যাপার আছে। কোনো কিছুর কেয়ার করা হয় না। যদি উনি পরপর দুটি কোয়ার্টার মিস করেন, ডিফল্টার হয়ে যাচ্ছেন। এভাবে আমাদের ডিফল্টারের সংখ্যা বাড়ছে।

তিনি বলেন, আমরা যদি বন্ড মার্কেটকে ভালো করতে পারি, তাহলে আমাদের উদ্যোক্তারা বন্ড মার্কেটে যাবেন। সেখান থেকে টাকা তুলবেন এবং ব্যাংক থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল নিয়ে তিনি ব্যবসা করবেন।

বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ।

 

Nagad
Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়