ডিম আমদানির প্রস্তাব খতিয়ে দেখছে সরকার
আসিফ শওকত কল্লোল || বিজনেস ইনসাইডার
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা (২৪ সেপ্টেম্বর): স্থানীয় বাজারে ডিমের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ভারত থেকে ডিম আমদানির প্রস্তাব খতিয়ে দেখছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঢাকায় একটি ডিম ১১ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ ভারতের কলকাতায় এর দাম মাত্র ৫ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশকে বলেন, আমরা দেশে ডিমের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় এখন ডিম আমদানি প্রস্তাবগুলো পরীক্ষা করে দেখছে।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান সেভ অ্যান্ড সেফটি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ভারত থেকে এক কোটি (১ কোটি পিস) ডিম আমদানির অনুমতি চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. মেহেদী হোসেন বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশকে বলেন, এক টাকা আমদানি কর দেওয়ার পর এখানে ওই ডিম এক পিস ৭ টাকায় বিক্রি করা যায়।
তিনি বলেন, আমি শুনেছি কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক ডিম আমদানির বিরোধিতা করেছেন। তবে, সরকার যদি বাংলাদেশের জনগণকে কম দামের ডিম সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায়, তবে ভারত থেকে ডিম আমদানির অনুমতি দিতে হবে।
প্রস্তাবে সেভ অ্যান্ড সেফটি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, বাংলাদেশের জনগণ কম দামে ডিম খেয়ে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে। এখন ডিমের বেশি দামের কারণে মানুষ প্রোটিন নিতে পারছে না।
বৃহস্পতিবার কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, কোনো অবস্থাতেই ডিম আমদানি করা উচিত হবে না। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করব (স্থানীয় চাহিদা মেটাতে), কিন্তু আমরা ডিম আমদানি করব না।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় ইতিবাচক মনে করলে ডিম আমদানি করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, দাম নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। আমি ভারত থেকে ডিম আমদানি করে কম দামে ভোক্তাদের কাছে দেওয়ার পক্ষে।
ওই দিনই মুন্সী বিভিন্ন পণ্যের মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত কাগজপত্র কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠান। বাণিজ্যমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, কৃষকদের স্বার্থও দেখা উচিত।
এক মাস আগে তিনি স্বীকার করেছিলেন যে ডিমের দাম অনেক বেশি। তিনি ১৭ আগস্ট বলেছিলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অত্যধিক বেড়েছে। ডিমও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রতি পিস ডিম ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এমতাবস্থায় ডিমের দাম কমাতে প্রয়োজনে ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশে ডিম বেশ জনপ্রিয়। এখানে ডিমের মাথাপিছু ব্যবহার প্রতি বছর ১০৪টি ডিমের সর্বনিম্ন সীমা অতিক্রম করেছে, যা জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা দ্বারা নির্ধারিত হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে একজন বাংলাদেশি বছরে গড়ে ১০৪.২৩টি ডিম খায়।
ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে জাপানিরা এশিয়ার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। একজন জাপানির প্রতি বছর ৩৩৭ টি ডিম খেয়ে থাকে।
গত বছর দেশে ডিম নিয়ে প্রায় ১২ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে। এ বছর ডিমের উৎপাদন বাড়তে পারে বলে বাজার সূত্রে জানা গেছে।