বুধবার

২৪ এপ্রিল ২০২৪


১১ বৈশাখ ১৪৩১,

১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট

মেহেদী হাসান || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ১২:০৭, ২৭ এপ্রিল ২০২২   আপডেট: ১২:১৩, ২৭ এপ্রিল ২০২২
বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট

গ্রাফিক্স:বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ

ঢাকা (২৭ এপ্রিল): বেসরকারি চাকরিজীবী কামরুল হাসান। চার সদস্যের পরিবারে তার মাসে পাঁচ থেকে সাত লিটার ভোজ্যতেল লাগে। নিজ এলাকায় মিরপুর-২ এবং তার আশপাশের এলাকাগুলোতে তেল না পেয়ে অফিস শেষ করে ঢাকার অন্যতম বড় পাইকারি ও খুচরা বাজার কারওয়ানবাজারে গিয়ে দেখেন সেখানেও প্রায় একই অবস্থা, তেল নেই। সেখানে দু-একটি দোকানে তেল থাকলেও তারা কেবল তেল বিক্রি করবেন না বলে জানিয়ে দেন; তেলের সঙ্গে নিতে হবে বিভিন্ন পণ্যও।

বিক্রেতাদের কেউ বলছেল পাঁচ লিটারের এক বোতলের সঙ্গে নিতে হবে এক কেজি সরিষার তেল। একত্রে যার দাম হবে ১১৫০ টাকা। আবার কেউ সানফ্লাওয়ার তেলের অফার করছেন যার পাঁচ লিটারের দাম ৯০০ টাকা। তাই, তিনি বিভিন্ন দোকান ঘুরে তেল না পেয়ে বাধ্য হয়ে বাসায় ফিরে যান।

সম্প্রতি মিরপুর-২ রিটেইল চেইন শপ ‘স্বপ্ন’তে দেখা যায়, সয়াবিন তেলের স্টক নেই। ক্রেতারা তেল কিনতে গিয়ে ফিরে আসছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বপ্নের এক বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, ভোজ্যতেলের যা স্টক ছিল সব শেষ হয়ে গেছে। তাই, এখন সয়াবিন তেল বিক্রি করতে পারছেন না।  

ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকা সাভারে বিভিন্ন দোকানে দেখা যায় সয়াবিন তেল নেই। তবে, যে সকল দোকানে সয়াবিন তেল আছে তারা পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি করছেন ৮০০ টাকা। এ নিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের সঙ্গে প্রায়ই দেখা যায় দোকানিদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়াতে। খুচরা বিক্রেতারা জানান, পাঁচ লিটারের চারটি বোতলের সঙ্গে নিতে হয় এক কেজির চা পাতা। যা তিনি বিক্রি করতে পারছেন না বলেও জানান।  

তেলের সংকট নিয়ে রাজধানীর খুচরা ও পাইকারি বাজার কারওয়ানবাজারের খুচরা তেল বিক্রেতারা জানান, কোম্পানির প্রতিনিধিরা এক সপ্তাহ ধরে কোনো তেল সরবরাহ করছেন না। অর্ডার দিলেও ডিলাররা বলছে তাদের কাছে তেল নেই।

তবে, রাজধানীর একটি মেগা স্টোরের বিক্রেতাকে কারওয়ানবাজার থেকে এক ও দুই লিটারের ট্রাক ভর্তি তেল নিতে দেখা যায়। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, তার মেগা স্টোরে কোনো তেল নেই। তাই পাইকারি দামে তেল কিনতে কারওয়ানবাজার আসেন।

তিনি বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশকে বলেন, বিক্রয় প্রতিধিনিকে এক ঘণ্টা তেল দিয়ে বসুন্ধরার সয়াবিন তেল পেয়েছি। তবে পাঁচ লিটারের কোনো বোতল পাইনি।’

দাম নিয়ে তিনি জানান, খুচরা মূল্যেই তাকে পাইকারি কিনতে হয়েছে। অর্থাৎ, ১৬০ টাকা প্রতি লিটার।

মায়ের দোয়া জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা বাবলু বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশকে জানান, তীর কোম্পানির প্রতিনিধিকে তেলের অর্ডার দিলে তিনি জানান তাদের কাছে কোনো তেল নেই। শুধু হালিম মিক্স ও আটা আছে। এ ছাড়া অন্যান্য দোকানেও একই চিত্র দেখা যায়। এ বিক্রেতা আরও জানান, তাদের দোকানে কোনো ভোজ্যতেল নেই।

বাজারে সয়াবিনতেলের সংকট নিয়ে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশকে জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম যে পর্যায় বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে তেল এনে বিক্রি করাটা তাদের জন্যে বিশাল আর্থিক ক্ষতির ব্যাপার।

‘প্রতি লিটার ১৯০ টাকা দামে তেল এনে ১৬০ টাকায় কে বিক্রি করবে?’ মোস্তফা কামাল প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, জাহাজ ভাড়া বেড়েছে, ডলারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এ অবস্থায় তাদের পক্ষে এই দামে ভোজ্যতেল বিক্রি করা সম্ভব না।

বাংলাদেশে বছরে ভোজ্যতেল চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টন। মোট চাহিদার ৮০ শতাংশের উপর আমদানি করতে হয়। ২০২১ সালে পাম ওয়েল আমদানি করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫ লাখ টন ও সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ৭ দশমিক ৬ লাখ টন।

 

Nagad
Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়