শুক্রবার

২৯ মার্চ ২০২৪


১৫ চৈত্র ১৪৩০,

১৯ রমজান ১৪৪৫

তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের সুদিন চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ১৬:৪৫, ১৮ জানুয়ারি ২০২২   আপডেট: ১৬:৫৫, ১৮ জানুয়ারি ২০২২
তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের সুদিন চলছে

গ্রাফিক্স: বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ

ঢাকা (১৮ জানুয়ারি): বাংলাদেশের মতো বেকারত্বের দেশে কখনো শ্রমিক সংকট হতে পারে তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা এর আগে কখনো স্বপ্নেও ভাবেননি। কিন্তু বাস্তবে এখন সেটাই ঘটছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ৪০ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম এ খাতে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।  

এ পরিস্থিতিতে গার্মেন্ট সংশ্লিষ্টরা কেবল হতবাকই নন, গেল কয়েক মাসে যে পরিমাণ ফরমায়েস এসেছে সেটার চালান সময় মতো সরবরাহ করা নিয়েই তারা এখন উদ্বিগ্ন।

শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পরিস্থিতির সুযোগকে দক্ষ কর্মীরা পুরোপুরি কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। নিজেদের বেতন বাড়াতে তারা এখন যখন তখন কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করছেন।  

এমবি নিট ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমি এ পরিস্থিতির বড় ধরনের শিকার। কারখানা চালাতে আমার যখন আরও বেশি শ্রমিক দরকার, তখন কারখানায় কাজ করা শ্রমিকরাই কাজ ছেড়ে চলে যাচ্ছে।

মোট ৫০০ মেশিন অপারেটরের মধ্যে ৮০ জন এ মাসে কাজ ছেড়ে চলে গেছেন বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) কার্যনির্বাহী সভাপতি হাতেম বলেন, অনেক কারখানাই এর সামর্থ্যরে বাইরে অর্ডার নিয়েছে। তাই তারা এখন সময় মতো কাজ শেষ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ জন্য মজুরি যতই বেশি হোক না কেন, সেটা বিবেচ্য নয়।

বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশকে তিনি বলেন, কোন কোন কারখানা দিনে দুই শিফটে কাজ করা হচ্ছে। শ্রমিকদের আট ঘণ্টার কাজ করিয়ে ১০ ঘণ্টার মজুরি দিচ্ছে।

এ পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে, বিশ্লেষকরা বলছেন বর্তমান ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাতে পারে।

ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছিল। এটি ছিল এক মাসে রপ্তানি আয়ের রেকর্ড। এ হিসাবে, ছয় মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি ২৪ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পৌঁছাছে। এ রপ্তানি এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি।

তৈরি পোশাক শিল্পখাতের এ প্রবণতা বিশ্লেষণ করে ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার বলেছেন, আগামী দিনগুলোতে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা আরও বাড়বে।

বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশকে এম এ জব্বার বলেন, বিভিন্ন কারখানার ধারণক্ষমতার ব্যবহার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাই দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা আরও বেড়েছে।

তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে বিচক্ষণ এবং দক্ষ শ্রমিকরা আরও মজুরির আশায় অন্য কারখানায় চলে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

১৯৮০ এর দশকে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্প যাত্রা শুরু করে। এখন সারাদেশে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কারখানা চালু রয়েছে। এসব কারখানায় প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। এদের বেশির ভাগই হচ্ছেন নারী।
 
তৈরি পোশাক খাতে বর্তমান শ্রমিক ঘাটতির সঠিক কোন তথ্য নেই। তবে শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এ খাতে প্রায় ১৫ শতাংশ শ্রমিক ঘাটতি রয়েছে।

পোশাক রপ্তানির সঙ্গে সম্পৃক্ত রেজা গ্রুপের চেয়ারম্যান একেএম শহীদ রেজা বলেন, অনেক কারখানায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কম শ্রমিক দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। তারা রপ্তানির সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রতি মাসে ১০ শতাংশ শ্রমিক অন্য কারখানায় চলে যাচ্ছেন। তার কারখানার উৎপাদনে এর প্রভাব পড়ছে।

তিনি মনে করেন, তৈরি পোশাক খাতের চেয়ে ভালো বিকল্প থাকায় এখন আর আগের মতো চাকরির জন্য মানুষ তাদের কাছে আসছেন না।

বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশকে রেজা বলেন, এ ছাড়াও তৈরি পোশাক কারখানা থেকে শ্রমিকদের আয় ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাদের (শ্রমিকদের) হয়তো গ্রামে আরও ভালো কাজের বিকল্প রয়েছে।

তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিক সংকট থেকে উত্তরণের পথ নিয়েও রেজা কথা বলেছেন। তিনি বলেন, শ্রমিকদের জন্য আমাদের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং এ কাজ শ্রমিকদের জন্য লাভজনক করতে হবে। আর এ জন্য কারখানার মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

Nagad
Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়