রোববার

২৮ এপ্রিল ২০২৪


১৫ বৈশাখ ১৪৩১,

১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

করোনা মহামারি: প্রবাসীরা বাঁচিয়ে দিল বাংলাদেশকে

মোঃ ওয়াসিম উদ্দিন ভূঞা || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ২৩ জুন ২০২১   আপডেট: ২৩:৫২, ২৩ জুন ২০২১
করোনা মহামারি: প্রবাসীরা বাঁচিয়ে দিল বাংলাদেশকে

গ্রাফিক্স:বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ

ঢাকা (২৩ জুন): করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি কিছু সময়ের জন্য স্থবির হয়ে পড়লেও, এ দুর্যোগে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করেছে প্রবাসীদের আয়।

বিদায়ী বছরে বাংলাদেশে আসা প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) পরিমাণ ছিল এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। তবে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত ১১ মাসে দেশে প্রবাসী আয় আসার পরিমাণ ২২ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন চলতি অর্থবছর শেষে এ আয়ের মোট পরিমাণ প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াতে পারে।

সমষ্টিগত ভাবে এ অর্থ ২ লাখ ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সমান। যা বিদায়ী অর্থবছরে বরাদ্দ দেশের মোট উন্নয়ন বাজেটের চেয়েও বেশি। এই অর্থ দিয়ে চারটিরও বেশি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে, লাখ লাখ প্রবাসীর পাঠানো রেমিটেন্সের এই প্রবাহ কোভিডের মতো অত্যন্ত কঠিন সময়ে বাংলাদেশকে, বিশেষত গ্রামীণ অর্থনীতি রক্ষায় মূল ভূমিকা পালন করেছে।

অর্থনীতিবিদ ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কোভিড -১৯ মহামারির এ সময়ে বিভিন্ন কারণে দেশে আসা রেমিট্যান্সের প্রবাহ অপ্রত্যাশিত ভাবে বেড়েছে।

তারা বলেছেন, রেমিট্যোন্স বাড়ার বড় কারণ হিসেবে মহামারির সময় দেশে ফেরা শ্রমিকদের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা যায়।

তারা বলছেন, ‘হুন্ডি’ (অর্থ স্থানান্তরের অবৈধ পন্থা) নিরুৎসাহিত করতে সুবিধাভোগীদের ২ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া এক্ষেত্রে বেশ কাজে দিয়েছে।

কোন কোন বিশেষজ্ঞ আবার মনে করেন যে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে পরিবারের সদস্যরা আর্থিক সমস্যায় পড়তে পারে ভেবে প্রবাসীরা উদার হস্তে দেশে টাকা পাঠিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কোভিড-১৯ বাংলাদেশের অনেকের আয়ে প্রভাব ফেলেছে। তাই শ্রমিকরা পরিবারের সদস্যদের সহায়তার জন্য সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন।’

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা অর্থনৈতিক দুরাবস্থার এই সময়ে অবৈধ পথে অর্থ পাঠালে তা সময় মতো নাও পৌঁছাতে পারে ভেবে বৈধ পথে (ব্যাংক) মাধ্যমে তারা অর্থ পাঠিয়েছেন।

আমেরিকা ও কানাডাসহ উত্তর আমেরিকার দেশগুলি থেকেও রেমিট্যান্স আসার প্রবাহ অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. সালাহউদ্দিন আহমেদ উল্লেখ করেন। তিনি সরকারকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিদের আয় বাড়ে না। তাই, সেখান থেকে কিভাবে এতো টাকা এলো? তিনি ইঙ্গিত করেন পাচার হওয়া টাকা আসছে কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ১৭০ টি দেশে ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মী হিসেবে কাজ করছেন।

এদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ মধ্য প্রাচ্য ও পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন বলে বিএমইটি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

তারা জানিয়েছেন, রেমিট্যান্সের সিংহভাগ মধ্যপ্রাচ্য এবং পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে কর্মরত প্রবাসীরাই পাঠিয়েছেন।

বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেশন (বিসিএসএম) এর সহ-সভাপতি সৈয়দ সাইফুল হক বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশ’কে বলেন, জাতীয় অর্থনীতিতে প্রধান ভূমিকা পালনকারী প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

সাইফুল বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের জন্য যে প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং পেনশন প্রকল্পের প্রস্তাব করেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সেটা অনুমোদন করা উচিত।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ সাইফুল সব জেলায় বিদেশ থেকে আসা অভিবাসীদের তালিকাভুক্ত করে তাদের নিজ নিজ শহরে ব্যবসা শুরু করার প্রস্তাব করেছেন।

তিনি বলেন, ‘দেশে আসা অভিবাসী এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের উচিত তাদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদেরকে ব্যবসা বাণিজ্যে নিয়োজিত করা।’

ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২০ সালের এপ্রিলের পর পাঁচ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন।

কোভিড -১৯ এর সংক্রমণ বিভিন্ন দেশে প্রবাসী কর্মীদের চাকরির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর ফলে তারা দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন।

এদিকে, বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি এক প্রতিবেদন বলেছে যে, রফতানি এবং শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের কিছু প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

‘বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট আপডেট-মুভিং ফরওয়ার্ড: কানেকটিভিটি অ্যান্ড লজিস্টিকস টু স্ট্রেনদেন কম্পিটিটিভনেস’ শীর্ষক বিশ্বব্যাংকের নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  কোভিড -১৯ মহামারির কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পরে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন ধীরে ধীরে সেই পরিস্থিতি থেকে কাটিয়ে উঠছে। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ফলে দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি মন্থর হয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছিল।

 

Nagad
Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়