বুধবার

২৪ এপ্রিল ২০২৪


১১ বৈশাখ ১৪৩১,

১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

স্ত্রী-শাশুড়িসহ তিনজনকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ, গুরুতর আহত আরও তিনজন 

শেরপুর প্রতিনিধি || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ১৬:৫৮, ২৪ জুন ২০২২   আপডেট: ১৭:১১, ২৪ জুন ২০২২
স্ত্রী-শাশুড়িসহ তিনজনকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ, গুরুতর আহত আরও তিনজন 

স্ত্রী, শাশুড়ি ও চাচা-শ্বশুরকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ অভিযুক্ত জামাই মিন্টু মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

শেরপুর (২৪ জুন): শেরপুরের শ্রীবরদীতে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী, শাশুড়ি ও চাচা-শ্বশুরকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে জামাই মিন্টু মিয়ার (৪৩) বিরুদ্ধে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের পুটল গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বোরকা পরে ঘরে ঢুকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত মিন্টু মিয়া। আজ শুক্রবার ভোরে পুলিশ অভিযুক্ত মিন্টু মিয়াকে (৪০) আটক করেছে। মিন্টু উপজেলার গেড়ামারা গ্রামের হাইমউদ্দিনের ছেলে।

নিহতরা হলেন- মিন্টু মিয়ার স্ত্রী মনিরা বেগম (৩০), শাশুড়ি শেফালী বেগম (৫০) ও চাচা শ্বশুর মাহমুদ হাজী (৬২)। এ ঘটনায় আরও তিনজনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে ঘাতক জামাই। তারা হলেন- বাচ্চুনী বেগম (৫২), শ্বশুর মনু মিয়া (৭৫) ও মিন্টুর শ্যালক শাহাদাৎ হোসেন (৪০)। তারা আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন।

এদিকে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন শেরপুরের পুলিশ সুপার হাসান নাহিদ চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ হান্নান মিয়া, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (নালিতাবাড়ী সার্কেল) আফরোজা নাজনীনসহ পিবিআই, সিআইডি ও র‌্যাবের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. হাসান নাহিদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, পারিবারিক কলহের জেরে মিন্টু মিয়া দা দিয়ে কুপিয়ে স্ত্রী, শাশুড়ি ও চাচা-শ্বশুরকে হত্যা করেছেন। আরও তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। ঘটনার সময় স্থানীয়রা মিন্টু মিয়াকে চিনতে পারে। পুলিশ ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে।

পুলিশ ও নিহতদের স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৭ বছর আগে শ্রীবরদীর পুটল গ্রামের মনু মিয়ার মেয়ে মনিরা বেগমের বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী গেরামারা গ্রামের আব্দুল হাইয়ের ছেলে মিন্টু মিয়ার সঙ্গে। তাদের সংসারে দুই সন্তান রয়েছে। বেশ কিছুদিন আগে মিন্টু মিয়া কোনো কাজকর্ম না করায় সংসারে শুরু হয় পারিবারিক কলহ। 

তারা আরও জানায়, এই নৃশংস হত্যার কারণ দাম্পত্য কলহ, মিন্টুর নিঃসঙ্গতা এবং সদ্য শ্যালকের বিয়েতে মিন্টুকে দাওয়াত না দেওয়া। এমন সব ঘটনার জেরে গত রমজান মাসের বাপের বাড়ি চলে আসেন মনিরা বেগম। এরপর মিন্টু কয়েকদিন স্ত্রী মনিরা বেগমকে নিতে শ্বশুরবাড়ি এলেও মনিরা বেগম স্বামীর বাড়ি যাননি। আগের বিবাদ ও বিয়েতে দাওয়াত না পাওয়ায় রাগে-ক্ষোভে ধারালো রাম দা ও চাকু নিয়ে বোরকা পরে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে স্ত্রীর বাড়িতে প্রবেশ করে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রথমে শ্যালককে কোপায়। পরে শাশুড়ি ও চাচা শ্বশুরসহ অন্যরা এগিয়ে আসলে তাদেরকেও কোপাতে থাকে। এসব দেখে ভয়ে স্ত্রী মনিরা পাশের গোয়াল ঘরে প্রবেশ করে। পরে গোয়াল ঘর থেকে খুঁজে মনিরাকে নিয়ে এসে কোপাতে থাকে।

নিহতদের মধ্যে দুইজনের লাশ বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে। একজনের লাশ ময়মনসিংহে। একজনের লাশ উদ্ধার করেছে শ্রীবরদী থানায় পুলিশ। মিন্টু মিয়ার ব্যবহৃত বোরকাটি পাশের একটি ক্ষেত থেকে জব্দ করা হয়েছে।

জানা যায়, হত্যার পর ওই ঘাতক ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ গজ দূরে একটি গাছের আগ ডালে সারারাত বসে ছিলেন। তবে, ঘটনার পর পরই পুলিশ চারদিক ঘিরে রাখে। শ্রীবরদী থেকে বের হওয়ার সকল রাস্তায় সারারাত পুলিশের কড়া নজরদারি ছিল। রাস্তায় চলাচলে সাধারণ মানুষ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে পড়েছে। পাশেই ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় পুলিশ ও বিজিবি তৎপর ছিল। একপর্যায়ে পুলিশ তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পারে ঘাতক মিন্টু ঘটনাস্থলের আশপাশেই আছে। পরে ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে পুলিশ তাকে একটি গাছে সাদা প্যান্ট পরা অবস্থায় দেখতে পায়।

এ ব্যাপারে শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার বিশ্বাস জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে পারিবারিক কলহের জের ধরে মিন্টু মিয়া তাদের কুপিয়ে হত্যা করেছে।

Nagad
Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়