শুক্রবার

১৯ এপ্রিল ২০২৪


৬ বৈশাখ ১৪৩১,

১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজ যশোর মুক্ত দিবস

ডেস্ক রিপোর্ট || বিজনেস ইনসাইডার

প্রকাশিত: ১১:৫৮, ৬ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১২:১৫, ৬ ডিসেম্বর ২০২১
আজ যশোর মুক্ত দিবস

মুক্তিযোদ্ধাদের উল্লাস। প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত

যশোর (০৬  ডিসেম্বর): আজ ৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক যশোর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এইদিনে যশোর জেলা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর প্রচণ্ড প্রতিরোধে এইদিন যশোর সেনানিবাস ছেড়ে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদাররা। শত্রুমুক্ত হয় যশোর। আকাশে উড়ে বিজয়ী বাংলাদেশের রক্ত সূর্যখচিত গাঢ় সবুজ পতাকা।

স্বাধীনতা যুদ্ধে এই ঐতিহাসিক দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসনের সহায়তায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে শহরের টাউন হল ময়দানে পঞ্চাশজন শিল্পীর পরিবেশনায় মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণাদায়ী গণসঙ্গীত “জয় বাংলা, বাংলার জয়” পরিবেশনের পর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার সঙ্গে সঙ্গে ৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন। এ ছাড়া বর্ণিল ও বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করবে।বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে পুস্পস্তবক অর্পণ করবেন সর্বস্তরের মানুষ। 

মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বাংলাদেশ লেবারেশন ফোর্স মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) বৃহত্তর যশোর জেলার (যশোর,নড়াইল,ঝিনাইদহ,মাগুরা) উপ-অধিনায়ক রবিউল আলম জানান, ১৯৭১ সালের ৩, ৪ ও ৫ ডিসেম্বর যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পাকস্তানি  হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এ সময় মিত্র বাহিনী সীমান্ত এলাকা থেকে যশোর সেনানিবাসসহ পাকি. আর্মিদের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে পর্যদস্ত পাকিস্তানি বাহিনী ৫ ডিসেম্বর থেকে পলায়ন শুরু করে।

পাকিস্তানি হানাদাররা যশোর সেনানিবাস থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে খুলনার গিলাতলা সেনানিবাসের দিকে পালাতে থাকে। হানাদার বাহিনী ৫ ও ৬ ডিসেম্বর পলায়নকালে রাজারহাটসহ বিভিন্নস্থানে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে তাদের প্রচণ্ড লড়াই হয়। ৬ ডিসেম্বর বিকেলের আগে যশোর সেনানিবাস খালি করে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সব সেনা। ৬ ডিসেম্বর বিকেলে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যশোর সেনানিবাসে প্রবেশ করে।এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মুক্তির আনন্দে উচ্ছ্বসিত মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ঢল নামে শহরে। পাড়া মহল্লায় বের হয় খণ্ড খণ্ড মুক্তির আনন্দ মিছিল। মুক্তির আনন্দে জয় বাংলা শ্লোগানে ফেটে পড়ে গোটা যশোর জেলার মানুষ (বৃহত্তর যশোর)। 

এর পূর্বে, ১৯৭১ সালের ৩মার্চ যশোর শহরে মুক্তিকামী জনতার জঙ্গী মিছিলে পাকিস্তানি বাহিনী গুলি চালালে শহীদ হন চারুবালা কর।স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনিই প্রথম শহীদ। এর পর যশোরে সংগঠিত হতে থাকে পাকিস্তানি  হানাদার বাহিনী প্রতিরোধের আন্দোলনকারীরা।এর নেতৃত্ব দেয় সংগ্রাম পরিষদ। সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতে থাকে ছাত্র, যুবক ও মহিলাদের। ২৬ মার্চ পাকিস্তানি জল্লাদ বাহিনী তদানীন্তন জাতীয় সংসদ সদস্য  মশিয়ুর রহমানকে তার বাসভবন থেকে ধরে যশোর সেনানিবাসে নিয়ে নৃশংসভাবে অত্যাচার করে করে হত্যা করে।

২৯ মার্চ পাকি.বাহিনী যশোর শহর ছেড়ে সেনানিবাসে চলে যায়। ৩০ মার্চ যশোর সেনানিবাসে বাঙালি সৈনিকেরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লেফটেন্যান্ট আনোয়ারসহ অনেকেই এখানে শহীদ হন । ৩০ ও ৩১ মার্চ মুক্তিকামী জনতা মিছিল সহকারে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে হামলা চালায়।মুক্তি পায় সকল রাজবন্দী। জুলাই মাস থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের গতিধারা পাল্টে যায়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা যশোর শহর ও অন্যান্য এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থানগুলোতে প্রচণ্ড আক্রমণ চালাতে থাকে।

যশোর ৮নং সেক্টরের প্রথম দিকের কমান্ডার ছিলেন কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরী। পরবর্তীকালে কমান্ডার নিযুক্ত হন মেজর মঞ্জুর। যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে পাকিস্তানি  হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ৫ সেপ্টেম্বর শহীদ হন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ।যশোর সেনানিবাস থেকে শত্রুবাহিনী বিভিন্ন জেলা নিয়ন্ত্রণ করত। ২০ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যশোর সেনানিবাস দখলে অভিযান শুরু করে। পাকিস্তানি বাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি চৌগাছা ঘিরে ফেলে সম্মিলিত বাহিনী। জগন্নাথপুর ও সিংহঝুলির যুদ্ধের পর ২২ নভেম্বর রাতে চৌগাছা শত্রুমুক্ত হয়। এ দু’টি যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী হেরে গেলে তাদের মনোবল ভেঙ্গে পড়ে।

এ সময় যশোর সেনানিবাসের তিনদিকেই মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী শক্ত ঘাঁটি গেড়ে বসে। ৫ ডিসেম্বর যশোর ক্যান্টনমেন্টের অদূরে মনোহরপুর গ্রামে পাকিস্তানি  সেনাবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল লড়াইয়ের পর এক পর্যায়ে পাক বাহিনী অস্ত্রশস্ত্র ফেলে পিছুহটে যশোর ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেয়। যশোরে প্রতিরোধ যুদ্ধের শেষ অভিযান চলে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর। যুদ্ধে টিকতে না পেরে ৬ ডিসেম্বর  পাকিস্তানি বাহিনী যশোর ছেড়ে পালিয়ে যায় খুলনার দিকে। শত্রুমুক্ত হয় যশোর জেলা। মুক্তিযোদ্ধারা ও মিত্রবাহিনীর সদস্যরা  বয়ে আনেন যশোরবাসীর জন্য এক বিরল সন্মান। যুদ্ধবিধ্বস্ত মুক্ত যশোর কালেক্টরেটসহ শহরে উড়ে স্বাধীন দেশের গৌরবময় পতাকা। বাসস।
 

Nagad
Walton

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়